উত্তম চক্তবর্ত্তী,মনিরামপুর(যশোর): যশোরের মণিরামপুরে মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন আব্দুল করিম নামের এক যুবক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২য় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের (এসসিডিপি’র) আওতায় ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলার মুজগুন্নি গ্রামে ১ বিঘা জমিতে তিনি পরীা মূলকভাবে বারি মাল্টা-১ জাতের ১৪৫ টি চারা রোপন করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে নীবিড় পরিচর্যা ও জৈব প্রযুক্তি (ভার্মি কম্পোষ্ট/কেঁচো সার) ব্যবহার করে মাত্র দেড় বছরের মাথায় গাছে কিছু ফলন আসে । এ বছর প্রায় প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমানে ফল ধরেছে । এছাড়া তার বাগানের গাছ থেকে কলম তৈরী ও তা বিক্রি করে তিনি বছরে বাড়তি টাকা আয় করছেন । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক এলাকার মাটি মাল্টা চাষের উপযোগি । পরিকল্পিতভাবে এর চাষ করলে একদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটবে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা ।
যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চিনাটোলা বাজার থেকে পূর্বদিকে দূর্বাডাঙ্গা সড়কে কিছুদুর যেতেই পড়ে মুজগুন্নী গ্রাম । এ গ্রামেরই এক যুবক আব্দুল করিম । লেখাপড়া শেষ করে চিন্তা করতে থাকেন নিজেই নিজের পায়ে কিভাবে দাঁড়াবেন । ছোট বেলা থেকেই সংস্কৃতিমনা ও স্বাধীনচেতা ছিলেন তিনি । আব্দুল করিম টেলিভিশনে কৃষি অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রানিত হন মাল্টা চাষে । সে অনুযায়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২য় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের (এসসিডিপি’র) আওতায় ২০১৪ সালে তার নিজ গ্রামে ১ বিঘা জমিতে তিনি পরীামূলকভাবে বারি মাল্টা-১ জাতের ১৪৫ টি চারা রোপন করেন । এরপর নীবিড় পরিচর্যা ও জৈব প্রযুক্তি (ভার্মি কম্পোষ্ট/কেঁচো সার) ব্যবহার করে মাত্র দেড় বছরের মাথায় গাছে কিছু ফলন আসলেও এ বছর প্রায় প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমানে ফল ধরেছে । বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা ঝুলছে । আর উৎপাদিত মাল্টার রং ও স্বাদ দুটোই খুব ভাল । এ ছাড়া আব্দুল করিম স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কলমের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি তার বাগানের মাতৃ গাছ থেকে হাজার হাজার কলম তৈরী ও তা’ বিক্রি করছেন । সরেজমিনে তার বাগানে গিয়ে কথা হয় আব্দুল করিমের সাথে । তিনি বলেন, সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাছের খাদ্য ও পোকা-মাকড় দমনসহ এর যাবতীয় পরিচর্যা করে আসছি । এ পর্যন্ত তার বাগানে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে এক লক্ষ টাকার মত । প্রথমে আমি কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কারণএ অঞ্চলে মাল্টা চাষ যেহেতু নতুন সে অনুযায়ী গাছে কাঙ্খিত ফল পাব কি না? তবে বাগান করার তিন বছরের মাথায় এবার বাগানের প্রতিটা গাছে প্রচুর পরিমানে ফল ধরেছে । আর মাল্টার রং গাঢ় কমলা ও খেতেও খুব মিষ্টি । তিনি আরো জানান, তার বাগানের মাতৃগাছের কলম এর এলাকায় বেশ চাহিদা রয়েছে। বাগানে প্রায় ৫/৬ হাজার কলম তৈরী আছে । প্রতিটা কলম তিনি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন । সে হিসেবে এবছর কলম বিক্রি করে তার আয় হবে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা । আর কমলা বিক্রি থেকে দেড় লক্ষ টাকাসহ মোট আয় হবে সাড়ে সাত লক্ষ বলে আব্দুল করীম আশাবাদ ব্যক্ত করেন । উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টা লেবুর চাষ হচ্ছে । বিশেষ করে মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের আব্দুল করীম বারী মাল্টা-১ জাতের লেবুর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন । তিনি আমাদের দপ্তরের পরামর্শ নিয়ে সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তি ব্যাবহার করে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন । বানিজ্যিক ভাবে লাভ জনক হওয়ায় আব্দুল করীমের দেখাদেখি এলাকায় মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে ।
মুঠো ফোনে দেশে মাল্টা চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বংলাদেশ কৃষিগবেষণা ইন্সিটিটিউটের উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র- ফল বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: মোঃ আজমাত উল্লাহ এ প্রতিনিধিকে বলেন, মাল্টা- দেশের একটি সম্ভাবনাময় ফসল এবং দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । বিশেষ করে দেশের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, পিরোজপুরসহ অনেক জেলায় কৃষকরা মাল্টা চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন । তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ফলের চাষ হতে হবে অবশ্যই প্রযুক্তি নির্ভর । না হলে দীর্ঘ মেয়াদী ফলন পাওয়া যাবে না । সে জন্যে যারা বারী মাল্টা-১ জাতের বাগান করবেন তাদেরকে আগে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে । এ জন্যে দেশের প্রতিটি উপলোয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে । এছাড়া স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও চলতে পারেন । বারী মাল্টা-১ চাষে সরকারি-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমদানি নির্ভরতা কমে আসলে তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন সংশিষ্টরা ।