যশোরে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল খুনের বিচার হলো না ২১ বছরেও ॥ কর্মসূচির মধ্যে হত্যাবার্ষিকী পালিত

0
385

বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরের প্রথিতযশা সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকান্ডের দুই দশক পার হয়ে গেছে। তবুও বিচার পেল না তার পরিবার। এই দীর্ঘ সময়ে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতায় আটকে গেছে মামলার বিচারকাজ। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শুক্রবার প্রয়াত সাংবাদিক মুকুলের ২১তম হত্যাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আরএম আলম মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন কারো নাম উল্লেখ না করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। একপর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম থমকে পড়ে। আর এ কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে স্থগিত করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে। মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে অভিযুক্ত ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। এ রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতের (জেলা জজ) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম বদরুজ্জামান বলেন, এ মামলায় অভিযুক্ত ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি হলে নি¤œ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
এ অবস্থায় ৩০ আগস্ট নানা প্রতিবাদী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে শহিদ সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২১তম হত্যাবার্ষিকী। প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল শোক র‌্যালি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল।
এদিন সকালে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, ‘যশোরে সাহসী সাংবাদিকতাকে স্তব্ধ করতে ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট আরএম সাইফুল আলম মুকুলকে হত্যা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ঘাতকরা ২০০০ সালে আরও একজন সাহসী সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলকে হত্যা করে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত আদেশের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অবশ্য এ মামলা ভিন্নখাতে নিয়ে তদন্তের সময় নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকরীদের বিচার দাবি করছি।
সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি শহীদ জয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, নিহত মুকুলের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরীন, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, সাংবাদিক নেতা আনোয়ারুল কবীর নান্টু, ফারাজী আহমেদ সাঈদ, মাহবুব আলম লাভলু, নূর ইসলাম প্রমুখ। সভা পরিচালনায় ছিলেন ইউনিয়নের সাবেক সম্পাদক তৌহিদ জামান ও আকরামুজ্জামান। এরপর যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে অনুরুপ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সভাপতি শেখ দীনু আহমেদ। সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোর্শেদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন বিএফইউজে একাংশের যুগ্ম মহাসচিব মহিদুল ইসলাম মন্টুসহ নেতৃবৃন্দ।
এর আগে সাংবাদিকরা কালোব্যাজ ধারণ করে শোক র‌্যালিযোগে সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুলের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আলোচনা সভা শেষে প্রেসক্লাব যশোরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। #

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here