শিক্ষা বন্ধু শহিদুলের চোখে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে লাবনী আর ল্যাবণ্যের মত হাজার হাজার শিক্ষার্থী

0
715

ডি এইচ দিলসান : লাবনী, লাবণ্য আর অনন্য, যশোর কাঠের পুল এলাকার মাওলাদার হালদার এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আয়া সাজু খাতুনের তিন কন্যা ওরা। অনেক আগেই তাদের পিতা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য কোথাও, মা সাজু কঠোর পরিশ্রম করে ৩ কন্যার লেখাপড়া করাচ্ছে, যোগাচ্ছে আহার আর মাঠা গোজার ঠাই। লাবনী আর লাবণ্য যশোর মোহনগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে। টানাটানির সংসারে লেখাপড়া কতদিন চলবে জানে না সাজু খাতুন, খবর পেয়ে সোমবার লাবণ্য আর লাবনীর কাছে ছুটে যান শিক্ষা বন্ধু শহিদুল। আজ প্রথম দিনিই তাদের হাতে তুলে দেন ১৮ দিস্তা সাদা কাগজ আর ২৪টি বাংলা খাতা, সাথে স্কুল ব্যাগ ও কলম। এখানেই শেষ না যতদিন তারা লেখাপড়া চালিয়ে যাবে ভ্যান চালক শিক্ষাবন্ধু শহিদুল তাদের যাবতিয় শিক্ষা উপকরন ফৌছে দেবেন বলে জানান তিনি। ভ্যান চালিয়ে ২০০৮ সাল থেকে দরিদ্র, এতিম ও প্রতিবন্ধী প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়মিত শিক্ষা উপকরন বিতরন করে যাচ্ছেন শিক্ষা বন্ধু শহিদুল।
এ ব্যাপারে লাবন্য আর লাবনীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা খুব গরিব, বাবা দেখে না আমাদের, কেউ কোন সাহায্য করে না, অনেক সময় না খেয়েও থাকি আমরা। তারা বলেন, শহিদুল কাকু আজ আমাদের নতুন ব্যাগ আর অনেক খাতা দিয়েছে, কলমও দিয়েছে, আর মার কাছে খাতা কলমের জন্য কান্না করা লাগবে না।
এ ব্যাপারে লাবণ্যের মা বলেন, আমি অনেক কষ্টে মেয়েদেও মানুষ করার চেষ্টা করছি, মুখ ফুটে কারো কাছে চাই না, তবে শহিদুল ভাই আমাদের যে উপকার করেছে এমন আর কেউ করে না।
পর্দার আড়ালে থাকা মাথার ঘাম পায়ে ফেলা খেটে খাওয়া এই আলোকিত মানুষটির সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে বেরিয়ে এলো অনেক অজানা কাহিনী। শিক্ষাবন্ধু শহিদুল ইসলাম যশোর জেলার পুলেরহাট এলাকার কৃষ্ণবাটী গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
তিনি বলেন, আমার যখন ২ বছর বয়স তখন আমার বাবা মারা যায়, এর পর ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করি। তখন মাত্র ৪০ টাকার অভাবে আমি বিত্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। সে দিন থেকেই প্রতিঞ্জা করি অর্থের অভাবে কারো লেখোপড়া বন্ধ হতে দিবো না।
তিনি বলেন, আমি ২০০৪ সালে বিয়ে করি, এর পর ২০০৮ সাল থেকে আমি প্রতিটা গ্রামে গ্রামে, স্কুলে স্কুলে ঘুরে দরীদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদেরকে বই, খাতা, পেন্সিল,পোষাক, পরীক্ষার ফি ও নগদ টাকা দিয়ে আসছি। এমন অনেক সময় আছে আমি নিজে না খেয়ে ছেলে মেয়েদেরকে বই খাতা কিনে দিয়েছি। তিনি বলেন তার একটাই ইচ্ছা যত দিন বেচে আছি তত দিন এই কাজই কওে যাব। আর এ কাজের জন্য তার সব থেকে বড় অনুপ্রেরনা তার মা আর স্ত্রীর ।
তিনি বলেন, আমি কোন সময় ভ্যান চালায় আবার কোন সময় রিক্সা চালিয়ে উপার্জন করি। এর সাথে প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রী করে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করি। এর মধ্যে ২ হাজার টাকা আমি বই খাতা কেনার জন্য আলাদা করে রেখে দিই। প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে জমিয়ে দরীদ্র বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, যশোরের বিগত জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবির আমার কাজে খুশি হয়ে ভেকুটিয়া মুক্তেশ্বরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাধন খাতুন সহ ৩ ভাই বোনের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে যান। বর্তমানে তারা ওই টাকা দিয়ে একটি গররু কিনেছে। তিনি বলেন আমি এ আমার মায়ের জমিতি একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র করবো। যেখানে এস এস সি ও এইচ এসসি পাশ শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষন দিবো, যাতে করে দরীদ্র শিক্ষার্থীরা বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
এ ব্যাপারে যশোর সংবাদ পত্র পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকরাম-উদ-দৌলা বলেন, শহিদুলের মত আলোকিত মানুষের পাশে আছি আমরা। বর্তমান যুগে শহিদুল ভ্যান চালিয়ে যে ভাবে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন, সেটা সত্যিই অনেক বড় কাজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here