তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করালো আলোচিত সহকারী শিক্ষক!

0
620

নেপথ্যে ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী নিয়োগ দিয়ে ১৫ কোটি টাকা ঘূষ বানিজ্য

তালা প্রতিনিধি : তালা উপজেলা জনপ্রিয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসলাম বদলি হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার সর্বত্র গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তালার খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বহু অপকর্মের হোতা মো. আবুল কাশেম তাঁর বিশাল ক্ষমতাবলে (!) শিক্ষা অফিসারকে বদলি করিয়েছে বলে চারিদিকে খবর চাউর হয়। এতে উপজেলার শান্তিপ্রিয় সকল শিক্ষক, শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহ সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলি হবার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন।
তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসলাম একজন সৎ, দক্ষ এবং কর্মঠ অফিসার হিসেবে স্বীকৃত। তিনি ইতোপূর্বে একাধিকবার জাতীয়ভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা অফিসার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক গ্রহন করেন। অপরদিকে আলোচিত শিক্ষক মো. আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে নানান অনৈতিক অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন, যা’ এখনও চলমান রয়েছে।
জানাগেছে, তালা উপজেলার খলিলনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল কাশেম সরদারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের উঠতি বয়সের ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ, স্থানীয় কতিপয় মহিলাকে বিয়ের প্রলোভন দেখানো, বিদ্যালয়ে এসে মোবাইলে সার্বক্ষণিক কথা বলা ও ফেসবুক ব্যবহার, ঠিকমত শ্রেণিতে পাঠদান না করানো, একাধিক বিয়ে করা সহ পাচঁটি অভিযোগে পৃথক ৫টি তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগগুলো প্রমাণীত হয়। নারী কেলেংকারীর অপরাধে উক্ত শিক্ষককে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গত ৩০/০১/২০১৮ তারিখ ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.১৯.০০৭.১৭/২২২ নং স্মারকে বিভাগীয় উপ-পরিচালক, খুলনা এর নিকট উপজেলার বাহিরে প্রশাসনিক বদলির জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন। বর্তমানে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ০৪/০২/২০১৮ তারিখ ২৪৮ নম্বর এবং ৩০/০৮/২০১৮ তারিখ ১৭৯৮ নম্বর স্মারকে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।
উক্ত মামলার শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেতে আবুল কাশেম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলামের উপর রাজনৈতিক সহ নানান চাপ প্রয়োগ করে। তাতে কোনও লাভ না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম সরদার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’র সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’র মহাপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকটে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগগুলো ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেন এবং অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে রিপোর্ট দাখিল করেছেন।
সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম নিজেকে রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে উক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট বিভিন্ন সময়ে অযৌক্তিক ও অনৈতিক সুবিধা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে এই অভিযোগগুলো দায়ের করে বলে জানাগেছে।
এদিকে, উক্ত সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ তদন্তে প্রমান মিললেও তার বিরুদ্ধে কোনধরণের বিভাগীয় শাস্তি গ্রহণ করা হয় নাই। উক্ত সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনধরণের আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার কারনে পুরো সাতক্ষীরা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে তালা থেকে ১০ জন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি হতে হয়েছে। শিক্ষক নেতাদের দালালির কারনে কোন কর্মকর্তা এক বছরের বেশি সময় থাকতে না পারলেও বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম ২ বছর ২ মাস কার্যকাল অতিক্রম করেছেন।
সূত্রে প্রকাশ, বিভাগীয় শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম সরদার রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে বদলি করে দিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলামকে। একজন আলোচিত, বহু অপকর্মের হোতা ও বিভাগীয় মামলার আসামী প্রাইমারীর সহকারী শিক্ষক’র কথামতো জাতীয় পদক পাওয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বজ্ঞান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এবিষয়টি নিয়ে তালা উপজেলায় ব্যপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আবারও শিক্ষক নেতা ও দালালদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে তালা উপজেলা শিক্ষা অফিস। দক্ষ ও সৎ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলামের বদলির সংবাদ শুনে ক্ষোভে, দুঃখে বৃহস্পতিবার দুপুরে অফিসে আসা প্রাইমারীর অনেক শিক্ষকদের চোখে পানি টলমল করতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানান, তালা উপজেলা শিক্ষা অফিস হতে চিরাচরিতভাবে চলে আসা ঘুষ, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের হয়রানী সম্পূর্নভাবে নির্মূল করতে সক্ষম হওয়ায় একজন সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ শিক্ষা কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হলো। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কোনও ভাবে মেনে নেয়া যায়না।
তিনি আরো বলেন, তালা উপজেলায় ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে নতুন করে সরকারি হওয়া আরো ১শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরী নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপজেলার একাধিক রাজনৈতিক নেতা প্রত্যেক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১জন প্রার্থীর বিপরীতে ২/৩জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৮/১০ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে ১৮২টি বিদ্যালয়ের দপ্তরী প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া প্রায় ১৫ কোটি টাকা হজম করার জন্য ওই নেতারা কৌশল অবলম্বন করে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসলাম নিরপেক্ষভাবে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দানের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করেছেন। যে কারনে রাজনৈতিক নেতারা বিতর্কীত শিক্ষক আবুল কাশেম’র মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বদলি করার চেষ্টা চালায়।
এদিকে, কথিত শিক্ষক নেতাদের অনৈতিক দাবী, দূর্নীতি ও অত্যাচারের ধারাবাহিকতার সাথে দক্ষ উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অন্যত্র বদলির সংবাদে অত্র অফিসের একাধিক সহকারী শিক্ষা অফিসার সহ অফিসের কর্মচারীরা বদলি হবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। দূর্নীতিবাজ শিক্ষক ও কথিত নেতাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে এই সকল শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তালায় থাকতে চায়না বলে তারা জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here