যশোরের পেশাদার খুনী শ্যামনগরের নান্নু ভারতে খুনের গুঞ্জন উঠেছে

0
407

এম আর রকি : যশোর সদরের চুড়ামনকাঠি, চৌগাছা, কালীগঞ্জ ও বারোবাজার এলাকার মানুষের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোখলেছুর রহমান নান্নু ভারতে খুন হয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তার মৃত্যুর বিষয়টি দায়িত্বশীল কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। যশোর সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের সাইফুল ইসলাম সাফু মিয়ার ৯ সন্তানের মধ্যে মেজ নান্নু।
১৯৮৬ সালে শহরের রবীন্দ্র নাথ (আরএন) সড়কের একটি হোটেলে কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকেই অপরাধ ও মাদকের জগতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ভাড়াটে কিলার হিসেবে পরিচিতি পান। তার হাতে অন্তত ১৪ জন খুন হয়েছেন। নান্নুর বিরুদ্ধে ২০টির বেশি হত্যা মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট বিএনপিকর্মী কাশিমপুর ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের ইদ্রিস হত্যা মামলায় মোখলেছুর রহমান নান্নুসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি উপ-পরিদর্শক তহিদুল ইসলাম। এছাড়াও নান্নুর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম আজমল হুদা সাংবাদিকের বলেন, উড়ো খবর পাচ্ছি নান্নু ভারতে খুন হয়েছে। অফিসিয়ালি আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। নান্নুর হাতে নিহত বিএনপিকর্মী ইদ্রিসের ছেলে শামিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,আমরাও শুনেছি নান্নু ভারতে খুন হয়েছেন। তবে সেই খবর কতটুকু সঠিক জানি না। আমার বাবার হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নান্নুসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। সে আরো বলেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে এটা নতুন কোনো নাটক কি না তা জানি না। আমরা সব সময় আতংকে থাকি।অনুসন্ধ্যানে এলাকাবাসী জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী সর্বহারা দলের নেতা সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিত মোখলেছুর রহমান নান্নু ভারতে পালিয়ে আছেন। সেখানে অপহরণের পর গত ২১ আগস্ট তিনি খুন হয়েছে বলে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। নান্নুর বিরুদ্ধে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টুসহ অন্তত ২০টি হত্যা মামলা রয়েছে।
এর আগেও দুই বার খুন হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে সেই খবর ছিল ভুয়া। এবারও সেই রকম নাটক সাজানো হয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে যশোর শহরের রবীন্দ্র নাথ (আরএন) রোডে একটি আবাসিক হোটেলে বয়ের কাজ করতেন মোখলেছুর রহমান নান্নু। সেখান থেকেই তার অপরাধ জগতে প্রবেশ। এক সময় হোটেল ব্যবসা ছেড়ে মাদক ব্যবসায় নেমে পড়েন নান্নু।আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলে অল্প দিনের মধ্যে শ্যামনগরের সর্বহারা দলের নেতা ইউনুস আলী ইনো ও কেরো নজরুলে বাহিনীতে যোগ দেন। শুরু হয় আন্ডারওয়ার্ডে তার যাত্রা। নান্নুর দক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে সর্বহারা দলের আরেক নেতা শরিফুল তাকে দলে ভেড়ান। দলে কিলার ও সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পান নান্নু। ৯৭ সালের দিকে পুলিশের হাতে শরিফুল নিহত হলে সেই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেন নান্নু।শরিফুলের নাম মুছে দিয়ে বাহিনীর নাম দেন ‘মিয়া বাহিনী’। এলাকার ছিঁচকে সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের নতুন সদস্য করেন। ১৯৯৭ সালে ভাড়াটে খুনি হিসেবে আবির্ভূত হন নান্নু। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার প্রভাব ও ব্যক্তি দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা মিশনে ভাড়ায় ব্যবহার করা হয়। জেলা শীর্ষ নেতাদের আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে তিনি। তার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি হত্যা মামলা রয়েছে। আলোচিত হত্যাকা-ের মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর চৌগাছার পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চৌগাছার সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য বাবু, একই সালের ২৯ মার্চ কাঠ ব্যবসায়ী বিএনপি কর্মী ইদ্রিস আলী হত্যাকা-। ছয়টি হত্যা মামলায় নান্নু প্রধান আসামি। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ে নান্নুর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুরগাছা গ্রামের গুরুদাস, একই গ্রামের মিন্টু, বারোবাজার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রউফ, সুবর্ণসরা গ্রামের মোমিন, যশোর সদরের মথুরাপুর গ্রামে চকম আলী, ইছালি গ্রামের কোহিনুর, সাজিয়ালি গ্রামের আনিস, হাশিমপুর গ্রামের জয়নাল ও লিটুসহ অসংখ্য। সরকারী সুত্রের খবর ছাড়া তার মৃত্যুর খবর সঠিক নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গোটা যশোর অঞ্চলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here