যশোর কেশবপুরের ত্রিমোহিনী মাদ্রাসায় তথ্য গোপন করে চার শিক্ষক নিয়োগ : সকলের বেতনভাতা বন্ধ

0
627

বিশেষ প্রতিনিধি : যশোর কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় তথ্য গোপন করে চার শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। ঐ চার জন রোববার ২৪ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসায় আসেন। তবে চলতি মাসের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। গঠিত হয়নি কোন এডহক কমিটি। সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, আগের কমিটি ঐ চার শিক্ষকের নিয়োগ দেয়নি। এনটিআরসিএ কাছে দেওয়া হয়নি শূন্য পদের তালিকা। ফলে কি ভাবে তারা নিয়োগ পেলেন এ নিয়ে এলাকয় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। তারা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাছে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ পত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছেন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা সাময়িক স্থগিত করেছেন।
জানা গেছে,২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বানিয়ে কতৃপক্ষ ধরা পড়ায় এলাকয় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা আদালতে বিচারধীন আছে।
শিক্ষক নিয়োগ পরিপত্র বলা হয়েছে কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি ২২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখ বা তৎপরবর্তী সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কোনো পদে নিয়োগ প্রদান করে তাহলে তা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে। এ তথ্য জানার পরও মাদ্রাসা কতৃপক্ষ কৌশল অবলম্বন করে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রযুক্তির সহযোগিতায় ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুরুপ একটি ভুয়া পত্রিকা তৈরী করে তার মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে কেশবপুর ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় পাঁচ শিক্ষকের পদ শূন্য দেখানো হয়। ঐ বিজ্ঞপ্তির আলোকে চার শিক্ষক নিয়োগে দেওয়া হয়েছে। যা শিক্ষক নিয়োগ পরিপত্র বহিভ’ত।
ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সদস্য স্থানীয় স্থানীয় মেম্বর আবুল কাশেম বলেন, কয়েক দিন ধরে কয়েক জন ছাত্র ও অভিভাবক অভিযোগ করছেন মাদ্রাসার বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়ে গেছে। এ তাদের সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয় খোঁজ নিতে বরিবার সকালে মাদ্রাসায় যায়। জানতে পারি ১১ মাসের বিল বাকি পড়েছে।
মাদ্রাসায় মিষ্ঠি মুখের আয়োজন কি কারণে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, নতুন চার জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। কি ভাবে তাদের নিয়োগ হল ? বিষয়টি জানার পর সাবেক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে দেখা করি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে তার অফিসে আসতে বলেন। অধ্যক্ষকে তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজ পত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দিতে বলেন।
মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ এনে অবিভাবক সদস্য আব্দুল জলিল সানা ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ মাদ্রসা ও কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগে এনে অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফুরে নামে আদালতে মামলা করেছেন ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের চাঁদড়া গ্রামের মোঃ রশিদুল আলমের ছেলে মোঃ আলি রেজা সাজু । মামলা বিচারধীন আছে।
মাদ্রাসার কয়েক জন শিক্ষক নাম না প্রকাশ করা শর্তে জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষক হাজিরা খাতা অধ্যক্ষ নিজ জিম্মায় রেখেছেন। ফলে মাদ্রাসার কোন শিক্ষক ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারিনি । ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার জন্য অধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা হয়। এ সময় স্বাক্ষর করতে গিয়ে দেখি নতুন আরও চার শিক্ষকের নাম। তারা জানা ১৫ তারিখের আগে ঐ চার শিক্ষক কোন দিন মাদ্রাসায় আসেনি। এমনকি হাজিরা খাতায় তাদের নামই ছিল না। তারা জানান, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসাবে হাসান বায়েজিত ও ইবতেদায়ি শিক্ষক ইকবাল হোসেনের নাম দেখেছেন। কৃষি শিক্ষা ও ইংরেজি শিক্ষকের নাম বলতে পারেনি তারা। তবে ঐ চার শিক্ষক নাম মাদ্রাসার নৈশ্য প্রহরীর নামের শেষে লেখা হয়েছে বলে জানান তারা।
ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফুরের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন অফিসের কাজে ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে। তবে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, কেশবপুর ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ পত্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। তার পর বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে।
কেশবপুর থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় চার শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাছে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ পত্র চেয়েছি। কাগজ পত্র হাতে পেলেই তা যাচাই করে দেখা হবে। তবে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here