যশোরের ভাতুড়িয়ার ইমরোজ হত্যা মামলায় ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট

0
276

এম আর রকি : যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়ায় গ্রামে আলোচিত ইমরোজ হোসেন হত্যা মামলায় ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের এসআই শামিম হোসেন যশোর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেন। এ সময় এ মামলা থেকে ৬ জনকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন। চার্জশীট ভূক্ত আসামীরা হচ্ছে, মামলার প্রধান আসামী যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের দাঁড়িপাড়ার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সেলিম রেজা পান্নু, চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার মৃত তৌহিদুল ইসলামের ছেলে আকিবুর রহমান, সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার আনুর বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তফা ওরফে মোস্ত, বাহাদুরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আলী হোসেন, যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকার আজিজুল হকের ছেলে খাইরুল ইসলাম রিংকু, চাঁচড়া মধ্যপাড়ার মৃত মিজানুর রহমান ভগোর ছেলে আতিকুর রহমান স্বাধীন, ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার শাহজাহানের ছেলে আব্দুর রহিম বিশ্বাস, চাঁচড়া গোলদারপাড়ার মোশারফ হোসেন খোকনের ছেলে শাহিন রেজা, হঠাৎপাড়ার বাবর আলীর ছেলে রনি শেখ, ভাতুড়িয়া-নারায়ণপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার এনামুল সরদারের ছেলে নাজমুল হোসেন, ভাতুড়িয়া মর্ধপাড়ার সেলিম হোসেন রাজা মিয়ার ছেলে তানভীর হোসেন, ঝাউদিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান হাফিজের ছেলে সজল, কিসমত নওয়াপাড়ার জামসেদ ওরফে মকটুর ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিকী অভি এবং তদন্তে প্রকাশিত কিশোর অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে ভাতুড়িয়া হাফেজপাড়ার মাহবুব আলমের ছেলে হাসান মাহমুদ।
এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রমানীত না হওয়ায় এই মামলা অব্যাহতির আবেদন জানান চারজনকে। এরা হচ্ছে, ভাতুড়িয়া দাঁড়িপাড়ার গ্রামের দাঁড়িপাড়ার ইয়াসিন বিশ্বাসের ছেলে আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাগর, ভাতুড়িয়া হাফেজপাড়ার রশিদ ওরফে খোকন ডাক্তারের ছেলে ইমদাদুল হক মিলন, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলার নূর ইসলামের ছেলে আলমগীর হোসেন, চাঁচড়া ডালমিল ছোবেদ আলীর ছেলে রাসেল ওয়াসিক, মণিরামপুর উপজেলার পলাশী পূর্বপাড়ার আকবার আলীর ছেলে হৃদয় হাসান, আজগর আলী গাজীর ছেলে আশিকুর রহমান। মামলার বিবারনে জানাগেছে,ভাতুড়িয়া বিল হরিণায় বাদী নূর ইসলাম নূরুর ১০ বিঘা জমির উপর একটি মাছের ঘের ও গরুর খামার রয়েছে। বড় ছেলে ইমরোজ হোসেন ওই খামার দেখাশুনা করেন। ঘটনার দিন গত বছরের ২৪ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টায় যশোরের মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের এক তরুণ-তরুণী একটি প্রাইভেটকারে উক্ত ঘের এলাকায় বেড়াতে আসেন। সে সময় নুর ইসলামের ছোট ছেলে ইসরাজুল ইসলাম তাদের কাছে জানতে চান কি কারণে এখানে এসেছে। তারা জানায়, তারা স্বামী-স্ত্রী এখানে বেড়াতে এসেছে। এ নিয়ে ইসরাজুলের সাথে তাদের দুইজনের কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায় তাদের দুইজনকে ঘেরের মধ্যে আটক করে রাখে। এরপর আটক থাকা তরুণ মোবাইল করে কয়েকজন সন্ত্রাসীদের ডেকে আনে। আবার ইসরাজুল ও মোবাইল করে তার ভাই ইমরোজকে ডেকে আনেন। কিন্তু ওই তরুণের ফোনে আসা সন্ত্রাসীরা এসেই ইমরোজকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্সক জখম করে। ইমরোজ মাটিতে পড়ে গেলে সন্ত্রাসী ইমরোজকে গুলি করে। ইমরোজকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে তিনটার দিকে মারা যান। এই ঘটনায় নিহতের পিতা নূরুল ইসলাম নূরু বাদী হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা রেকর্ডের পর প্রথমে থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার এবং পরে ডিবি পুলিশের এসআই শামিম হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন।
এদিকে ঘটনার দিন পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইমরোজকে হত্যার হুকুম দাতা ও সেল্টারদাতা সেলিম রেজা পান্নুর বাড়িতে ও চাঁচড়া মোড়ের ব্যবসায়ীক অফিস তল্লাশি করে পুলিশ একটি সর্টগান, ৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ৭৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি এই মামলার রাজু আহম্মেদ, সেলিম হোসেন রাজা, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও আনিসকে ঘটনার সময়ই পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় সেলিম রেজা পান্নুসহ কয়েকজন আদালত থেকে জামিনে বের হয়। আকিবুর রহমানকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়। এ সময় আকিবুর রহমানের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ আলাদা অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন।#