রাজগঞ্জের ভাসমান সেতুতে দর্শনার্থীদের ভিড়, গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট

0
551

উত্তম চক্তবর্তী: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের ঝাঁপা বাঁওড়ে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর নির্মিত ভাসমান সেতু দেখতে দর্শনার্থীদের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ দূর-দুরন্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ সেতু দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন। যদিও ছুটির দিন গুলোতে দর্শনার্থীদের চাপ বাড়ছে অনেক। আবার অনেকে দল বেঁধে এখানে আসছেন পিকনিকে। তাইতো দর্শনার্থীদের চাহিদার কথা ভেবে সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঝাঁপা গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি পিকনিক স্পট। সেতু নির্মাণ কমিটিসহ স্থানীয়দের প্রায় ত্রিশ বিঘা জমির ওপর ঘড়ে উঠেছে স্পটটি। আবার দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে ওই পাড়ে বসেছে নাগরদোলা। একইসাথে সেতুর দুই পাড়ে বসেছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। ফলে সেতুটি ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। বেড়েছে দোকানপাটে বেচাকেনা।
সেতুটি ঘুরে দেখতে দর্শনার্থীদের জন্য ৫,১০ও ২০ টাকা মূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ব্রিজের দুই পারে ৫-৬ জন্য ব্যক্তি এই টিকিট ব্রিক্রির কাজে ব্যস্ত। দিনে প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টিকিট বিক্রি করে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছেন সেতু নির্মাতা কমিটি। টিকিট বিক্রেতারা এমনটি জানালেও আয়ের সঠিক হিসাব জানাতে চাননি দায়িত্বশীলদের কেউ।
এদিকে দর্শনার্থীদের চাপে ব্রিজ সংরক্ষণে কাজ করছেন ব্রিজের কারিগর রবিউল ইসলাম। গতকাল দুপুরে সরেজমিন গিয়ে রবিউলকে ব্রিজের ওপর কাজ করতে দেখা গেছে। এসময় কথা হয় সেতু দেখতে আসা দর্শনার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে।
অপরদিকে রাজগঞ্জের ঝাঁপা গ্রামবাসীর উদ্যোগে নির্মিত ভাসমান সেতুটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসক সেতু। যা নিয়ে আগত দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা বলছেন নানা কথা।
ভাসমান সেতু দেখতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে এসেছেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তিন ছাত্র। তাদের মধ্যে সোহাগ হোসেন বলেন,‘ফেসবুকে সেতুটি দেখে তা ঘুরে দেখার ইচ্ছা হয়েছে। আমরা তিনজন এসেছি। সেতু দেখে অনেক ভাল লাগছে।’ ব্রিজটি নিয়ে গবেষণা করার জন্য তিনি শিক্ষকদের কাছে সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
একই সময়ে যশোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভাসমান সেতু দেখতে এসেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান। তার গাড়ির চালক রুহুল আমিন বাবু জানান,‘ব্রিজ দেখতে ভালই লাগছে। স্যার ব্রিজ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উপজেলার রুপদিয়া এলাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে সেতু দেখতে এসেছেন রিয়াজ উদ্দিন তুহিন নামের একব্যক্তি। তিনি বলেন,‘ব্রিজটি দেখতে সত্যিই অসাধারণ।’ শুধু রিয়াজ নয় প্রিয়জনকে নিয়ে ঝাঁপা বাঁওড়ের ভাসমান সেতু দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত আসছেন হাজারও মানুষ। আবার অনেকে সেতু দেখতে এসে বাড়তি আনন্দ পেতে চড়ে বসছেন নৌকায়,ঘুরে দেখছেন বাঁওড়।
সেতু দেখতে আসা লোকজনকে আনন্দ দিতে বাঁওড়ের পশ্চিম পাড়ে নাগরদোলা বসিয়েছেন সদর উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের আক্কাস আলি। তিনি বলেন,‘গত শুক্রবারে এসেছি। প্রতিদিন পনেরশ থেকে আঠারশ টাকা আয় হয়। সেখান থেকে এখানকার কমিটিকে দুইশ করে টাকা দিয়ে যা থাকছে কোনরকম চলছে।’
বাঁওড়ের পশ্চিম পাড়ের মিষ্টির দোকানদার আকতারুজ্জামান বলেন,‘আগে দোকানের পাশাপাশি গাড়ি চালাতাম। দোকানের আয়ে সংসার চলত না। এখন ব্রিজ হওয়ায় গাড়ি বাদ দিয়ে সারাদিন দোকানে থাকছি। প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়।’ এছাড়া বাঁওড়ের দুই তীরে বাদাম,চটপটি,ঝালমুড়ি ও চানাচুরসহ কয়েকটি দোকান বসেছে। সবার বেচাকেনা ভাল বলে জানান দোকানদাররা।
ভাসমান সেতুর কারিগর রবিউল ইসলাম জানান,‘ মূলত গ্রামবাসীর পারাপারের জন্যই ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছে। এত চাপ হবে বুঝতে পারিনি। তাই ব্রিজ সংরক্ষণে গত তিনদিন ধরে কাজ করছি।’
এদিকে ঝাঁপার বাঁওড়ে নির্মিত ভাসমান সেতুটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসক সেতু। যা নিয়ে নানাজনে নানা মন্তব্য করছেন। মঙ্গলবার ভাসমান সেতু দেখতে আসেন উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামের ইউসুফ আলী। তিনি সেতুর নামকরণের সাইনবোর্ডটি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ইউসুফ বলেন,‘গ্রামবাসী এত কষ্ট করে নিজেদের টাকা দিয়ে ব্রিজ তৈরি করল,যেখানে কারও কোন অবদান নেই,সেই ব্রিজের নাম কিভাবে জেলা প্রশাসক সেতু হয়।’ একই বক্তব্য সেতু দেখতে আসা অনেকের।
জানতে চাইলে ভাসমান সেতুর উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান বলেন,‘যেহেতু বাঁওড়টি সরকারি। জেলা প্রশাসক বাঁওড় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাছাড়া সেতু নির্মাণে শুরু থেকে জেলা প্রশাসক আমাদের পাশে ছিলেন। এই ডিসি তো আর স্থায়ী থাকবেন না। পরবর্তী কোন ডিসি এসে যদি প্রশ্ন তোলেন,কেন বাঁওড়ের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলো।’ এসব সমস্যা এড়াতে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছে,‘জেলা প্রশাসক সেতু বলেন তিনি।
আসাদুজ্জামান বলেন,‘সেতু দেখতে আসা মানুষের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। দর্শনার্থীদের চাহিদার কথা ভেবে এখানে এলাকাবাসীর ত্রিশ বিঘা জমির ওপর মেহগনী ও আম বাগানে একটা পার্ক তৈরি করা হয়েছে। পার্ক সাজাতে কাজ চলছে। উপস্থিত দুটি টয়লেট ও একটি টিউবয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এই পর্যন্ত গত দুই শুক্রবারে চালুয়াহাটির একটি মাদরাসা থেকে ও ইউনিলিভার কোম্পানির মণিরামপুরের একটি গ্রুপ এখানে পিকনিকে এসেছে। আগামী শুক্রবারে ঝিকরগাছা থেকে একটি দল পিকনিকে আসার কথা রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন,‘টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের বিষয়টি এখন আমরা প্রচার করতে চাচ্ছি না। আগামী ২৭ তারিখে আমাদের একটা মিটিং আছে। মিটিং এর পর আয়ের বিষয়টি আপনাদের জানানো যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here